খেজুর গুড় এক ধরনের খাবার যা খেজুরের রস থেকে তৈরি করা হয়। বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আগুনের উত্তাপে রসকে ঘন ও শক্ত পাটালিগুড়ে পরিণত করা হয়। ধরন অনুযায়ী খেজুরের গুড়কে ঝোলা গুড়, দানাগুড়, পাটালি, চিটাগুড় ইত্যাদি ভাগে ভাগে ভাগ করা যায়।
খেজুর রস এবং গুড় খুবই সুস্বাদু। শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে পায়েস, বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা, তালের পিঠা, খেজুর গুড়ের জিলাপি ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। স্বাদ আর মানভেদে খেজুরের গুড় পাটালি, নলেন গুড়, হাজারী গুড় নামে পরিচিত।
খেজুরের গুড়ের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়ন: এই খেজুরের গুড় দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এই শিল্পে প্রচুর পরিমাণে অর্থনৈতিক লাভ অর্জন করা সম্ভব। গ্রাম অঞ্চলে এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে অনেক সাহায্য করতে পারে।
বিলুপ্তি
খেজুরের গুড় বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ এখন আর কেউ সাধারণত গাছ কাটতে সক্ষম নয়। কেননা, এই কাজে পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম। দ্বিতীয়তঃ বাড়ি ঘর তৈরির জন্য ইট ব্যবহার করা হয়, এই ইটের প্রধান পোড়ানোর উপাদান হল খেজুর গাছ দ্বারা অনেক পরিমাণে আগুন জলে যার ফলে ইটভাটায় বেশি খেজুর গাছ ব্যবহার হয়। এই কারণেই খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
রস আহরণ
একটি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পূর্বে অগ্রহায়ণের শেষের দিকে গাছের কাণ্ডের একেবারে উপরের অংশে পাতাসম্বলিত বাকলগুলি ধারালো দা দিয়ে চেঁছে পরিষ্কার করা হয় যাকে গাছ তোলা বলে। সাত থেকে আট দিন পরে পুনরায় পরিষ্কার করা হয়। গাছ তোলার দুই সপ্তাহের মাথায় চাঁছা অংশ কিছুটা কেটে নলি (বাঁশের নল) ও খিল লাগিয়ে এবং সম্মুখভাগে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়।
রস আহরণের সময়কালের উপর ভিত্তি করে খেজুরের রসকে জিড়ান, দোকাট এবং ঝরা এই তিনভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথম রাতের গুণে ও মানে সর্বোৎকৃষ্ট এবং পরিমাণেও সর্বোচ্চ রসকে বলা হয় জিড়ান । পরদিন বিকালে গাছের চোখ বা কাটা অংশটুকু দা এর সাহায্যে চেছে পরিষ্কার করা হয় এবং দ্বিতীয় রাত্রের নির্গত রসকে বলা হয় দোকাট। দোকাটের রস জিড়ানের মতো সুস্বাদু কিংবা মিষ্টি নয় এবং পরিমাণেও হয় কম। তৃতীয় রাতে প্রাপ্ত রসকে ঝরা রস বলা হয়। ঝরা রস দোকাটের চেয়েও পরিমাণে কম এবং কম মিষ্টি। অনেক ক্ষেত্রে ঝরা রস টক স্বাদযুক্ত হয়। পরবর্তী তিনদিন গাছকে অবসর দেওয়া হয়। এরপর আবার নতুন করে চাঁছা (কাটা) ও রস সংগ্রহ করা হয়।
খেজুরের রস আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। আবহাওয়া শীতার্ত এবং পরিচ্ছন্ন হলে রস পরিষ্কার ও মিষ্টি হয়। মেঘলা গুমোট রাতে খেজুরের রসে টকভাব আসে। নভেম্বরের প্রথম দিকে রস আহরণ শুরু হলেও ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
গুড় ছাড়া অন্য কিছু প্রস্তুত
সাধারণ অবস্থায় খেজুরের রস দীর্ঘসময় রেখে দিলে গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এই গাঁজনের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে তাড়ি বা দেশীয় মদ প্রস্তুত করা হয়। একটি বড় পাত্র বা তাফালে গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস ছেকে জ্বাল দেয়া হয়। এক পর্যায়ে রস ঘন হয়ে ঝোলা গুড়ে পরিণত হয়। পাটালি গুড় তৈরি করার জন্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘন করার পরে তা ছাঁচে ঢেলে দেয়া হয়। গুড়কে খুব বেশি জ্বাল দিলে চিংড়ি তৈরী হয় যা একদা গ্রাম বাংলা চকোলেট, দেলবাহার (পাক দেয়া গুড়ের মধ্যে সাধারণত বাদাম দেয়া থাকে) ইত্যাদি নামে বিক্রি হতো।
বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে খেঁজুরের গুড় স্থানীয়ভাবে তৈরি হলেও নির্দিষ্ট কিছু স্থানের গুড় নিজস্ব স্বকীয়তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন নাটোরের লালপুরের পাটালি, ঝোলা ও নলেন গুড়,যশোরের খাজুরার পাটালিগুড়, মানিকগঞ্জের হাজারী গুড় ইত্যাদি।
আমাদের খেজুর গুড়ের বৈশিষ্ট্য
- সম্পূর্ণ নিজেদের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খেজুরের খাঁটি গুড় প্রস্তুত করা হয় ।
- প্রথমে খেজুরের রস ভালোভাবে ছেঁকে পরিষ্কার পাত্রে রাখা হয়।
- এরপর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বাল দেওয়া হয়, ফলে গুড়ের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
- কৃত্রিম চিনি, রাসায়নিক রঙ, হাইড্রোজ, ফিটকিরি সহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। তাই ১০০ ভাগ খাটি ও প্রাকৃতিক।
- গুড় তৈরি শেষ হলে পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করা হয় এবং উন্নত প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে আপনার হাতে সুরক্ষিত অবস্থায় পৌঁছায় দেয়া হয়।
খেজুরের গুড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
খেজুরের গুড়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্য ও শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিচে কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার
খেজুরের গুড়ে থাকা কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি যোগায়, যা কর্মব্যস্ত দিনেও শরীরকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে শর্করা ও মিনারেলসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চিনির চমৎকার বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
উচ্চ পুষ্টিগুণ
খেজুরের গুড়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে। বিশেষ করে রক্তশূন্যতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ উপকারী, কারণ গুড়ে প্রচুর আয়রন আছে যা রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়ক।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
গুড় হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এনজাইম উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। খাবার পর খেজুরের গুড় খেলে হজমশক্তি বাড়ে ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যদিও গুড় মিষ্টি, তবুও এটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে কম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এটি নিরাপদে গ্রহণ করতে পারেন, তবে অবশ্যই পরিমিত মাত্রায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গুড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতকালে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন এক চামচ খেজুরের গুড় খাওয়া উপকারী। এতে থাকা সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের কোষগুলোকে মজবুত করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা
শীতকালে বা ধুলাবালি ও দূষণের কারণে অনেকেই শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যায় ভোগেন। খেজুরের গুড়ে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি শ্বাসনালীকে সুরক্ষিত রাখে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। এটি ফুসফুসের জন্য উপকারী এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। সর্দি, কাশি বা গলা ব্যথার ক্ষেত্রে গুড়ের ব্যবহার বিশেষ উপকারী।
খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে?
খেজুর গুড়ে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ উপাদান। যারা নিয়মিত এক চামচ গুড় খান, তারা পাবেন খেজুর গুড়ের নানান উপকারিতা। খেজুর গুড় ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন এক চামচ খেজুর গুড়।
খেজুরের গুড় খাওয়া কি ভালো?
খেজুরের গুড় একটি মূল্যবান খাবার যা পরিপাকতন্ত্রের উপকারিতার জন্য পরিচিত । খেজুরের গুড়ের উপকারিতা এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থেকে। ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজমের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আমিও অর্ডার করেছি। এখন শুধু হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
ওনেক ভালো নিতে পারেন 💖✌️